
আপনি কী ডিপ্রেশন আছেন ? আপনি কী জানেন ডিপ্রেশন কাকে বলে ? ডিপ্রেশন কী ? চলুন একটু পরে নেওয়া যাক।
নমস্কার বন্ধুরা আমি শান্তনু আপনাদের সবাইকে আমার এই chalokolkata.com এ স্বাগতম। আশা করি সবাই আপনারা ভালোই আছেন আর সুস্থ আছেন। মনে রাখবেন করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকুন. শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য অসুস্থতার মতো এই ভাইরাসের ক্ষেত্রেও সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা এবং জ্বরসহ হালকা লক্ষণ দেখা দিতে পারে । কিছু মানুষের জন্য এই ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে। নিজের খেয়াল রাখুন।
অবসাদ’ শব্দটি যদিও আমাদের অনেকের জানা আবার অনেকের জানা না থাকতেও পারে। যদি আমরা ডিপ্রেশনের খুব কাছাকাছি বাংলা প্রতিশব্দ খুঁজতে চাই, সবার আগে আসবে এই অবসাদ’ শব্দটি। অবসাদ – এই শব্দটির সাথে যে দুঃখ বা বিষাদ লেগে থাকে, সর্বনাশা রোগটিও ঠিক সেইরকমই। যে বিভিন্ন আঙ্গিকে ডিপ্রেশন বা অবসাদ রোগটিকে বোঝবার চেষ্টা করা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র দেওয়া নিয়মাবলী (গাইডলাইন)। এই নিয়মাবলী অনুযায়ী, অবসন্ন মন (‘লো মুড’), শক্তিহীনতা (‘লো এনার্জী’) এবং উৎসাহহীনতা (‘লো ইন্টারেস্ট’)-কে ডিপ্রেশনের আওতায় ফেলা হয়েছে।
মানসিক রোগ মানেই কি ডিপ্রেশন নাকি অন্য কিছু ?
মন ও মনের অসুখ মানেই ডিপ্রেশন নয়। আপাতদৃষ্টিতে যাকে ডিপ্রেশন বলে মনে হচ্ছে, হতে পারে তা আসলে কোন জটিল রোগের বাহ্যিক লক্ষণমাত্র। এই ব্যাপারটা মনে রাখা একান্ত জরুরী, কারণ চিকিৎসা পদ্ধতি ও চিকিৎসার ফলাফল, দুটোই আলাদা হয় রোগের ক্ষেত্রবিশেষে।
কোন অসুখ বা মানসিক রোগ অবসাদ বা ডিপ্রেশন ডেকে আনতে পারে? সেই তালিকাটি বেশ লম্বা ও জটিল। এ বিষয়ে যে অসুখটির কথা সবার আগে বলা উচিত, তা হল স্কিজোফ্রেনিয়া। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এর নেতিবাচক লক্ষণগুলির (নেগেটিভ সিম্পটমগুলি) প্রকাশ। স্কিজোফ্রেনিয়ার নেতিবাচক লক্ষণগুলি মূলত চার প্রকার, যেমন:-
1. কোন কিছু ভাল লাগার ক্ষমতা কমে যাওয়া (অ্যানহেডোনিয়া/Anhedonia),
2. কোন কাজ শুরু করার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলা (অ্যাভোলিসন/ Avolition)।
3. চিন্তা করা বা কথা বলার ক্ষমতা কমে যাওয়া (অ্যালোগিয়া)
4. মনের বিভিন্ন ভাব প্রকাশের ক্ষমতা সঙ্কুচিত হওয়া (অ্যাফেক্টিভ ফ্ল্যাটেনিং)
মুশকিলটা হয় এখানেই যে লক্ষণগুলি অনেক ক্ষেত্রেই ডিপ্রেশন রোগটির লক্ষণের মতন দেখতে লাগে। কিন্তু জৈবিকভাবে দুটি রোগ সম্পূর্ণ আলাদা এবং স্বাভাবিক ভাবেই চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা।
যে কোন রোগ নির্ণয় করতে দেরি হলে বা ভুল চিকিৎসা করলে, আসল রোগটি জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে। এমনকি সেই রোগ থেকে মস্তিষ্কে স্থায়ী প্রভাব পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে (সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম নার্ভ ইনজুরি বা স্নায়ুপ্রদাহ জনিত)। যার ফল মানসিক স্বাস্থ্যের প্রবল ক্ষতি থেকে প্রাণহানি, যেকোন কিছুই হতে পারে।
আরো যে রোগগুলিকে ডিপ্রেশন বলে ভুল ভাবা হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন শারীরিক রোগজনিত অবসাদ, নেশা ও নেশার বস্তুজনিত অবসাদ, পরিস্থিতির কারণজনিত অবসাদ। এর সাথে রোজকার ভালো-না-লাগা বা বহু প্রচলিত কথা ‘মুড সুইং’ তো আছেই। কিন্তু যেটা মনে রাখা দরকার সেটা হল ডিপ্রেশন রোগটি অনেক বেশি জটিল, সুদূর প্রভাব বিস্তারকারী, এবং অনেক বেশী ক্ষতিকারক, যদি না সঠিক সময়ে সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে, যখন ডিপ্রেশন এত তীব্র হয় যে তাতে বাস্তব ভিত্তিহীনতা অবধি এসে যায়। বাস্তবে যা সত্যি নয়, সেরকম ধারণা মনের মধ্যে তৈরি হয় এবং রোগীর দৈনন্দিন জীবন সেই ধারণার দ্বারা পরিচালিত হয়।
ডিপ্রেশন বা হতাশা কথাটার মধ্যেই লুকিয়ে আছে ড্রিপেশনের ভাবার্থ। এই ডিপ্রেশন সর্দি-কাশির মতো এক এক করে প্রায় সব মানুষকে আক্রমণ করে ফেলছে। ফলে, রোগ ও রোগাক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
ডিপ্রেশন থেকে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, অনিদ্রা, ব্লাড প্রেশার, ক্যানসারসহ বহু জটিল রোগ দেখা দিচ্ছে, সঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়ে যাচ্ছে। ডিপ্রেশন থেকে যেমন মারাত্মক ধরনের অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে, তেমনই অনেক অনৈতিক কাজও করা হচ্ছে। আরেকটা জিনিস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তা হলো নেশার যে এত রমরমা অবস্থা তার কারণও ডিপ্রেশন। ডিপ্রেশনে আক্রান্ত কিনা বুঝতে হলে বেশি কিছু করার দরকার নেই, শুধু নিম্নের কয়েকটি বিষয়ের ওপর লক্ষ্য রাখলেই দেখা যাবে, ডিপ্রেশন কীভাবে নিজের অজান্তেই সর্বব্যাপী হয়ে গেছে। এখন আমাদের জানতে হবে নিজের জন্য বা অন্য কারোর জন্য যে ডিপ্রেশন কাটানোর উপায়, ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির দোয়া, ডিপ্রেশন নিয়ে কিছু কথা বা হতাশা থেকে মুক্তির উপায়।চট করে জেনে নি।
1. ডায়েরি লিখুন
আপনি হয়তো কখনোই ডায়েরি বা নোটবুক এ কিচ্ছু লেখেননি। যে বিষয়টি আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে, মানসিক চাপের কারণ হচ্ছে সেটি একটি ডায়রিতে লিখুন। তার মানে এটা নয় যে শুধু আপনার কষ্ট তাই লিখবেন। পাশাপাশি আপনি কী চান বা কী করলে আপনার ভালো লাগত সেই বিষয়টিও লিখুন। ডায়েরি লেখার এই অভ্যাসটি মানসিক চাপ কমাতে অনেকটা সাহায্য করবে আপনাকে।
2. নিজেকে ব্যস্ত রাখুন
আপনি আপনার দুশ্চিন্তাকে মাথা থেকে দূরে রাখতে হলে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। আপনার মস্তিষ্ক এবং হাত ব্যস্ত থাকে এমন কোন কাজ করুন যেমন গেম খেলুন বা কোন হস্তশিল্প তৈরি করুন। বলা হয়ে থাকে, “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।” এটি কিন্তু বাস্তবিকই সত্য। আপনি কোনো কাজ না করে অলসভাবে শুয়ে বসে থাকলে হতাশা আর দুশ্চিন্তা আপনাকে ঘিরে ধরবে- এটাই স্বাভাবিক। তাই যে কোনো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
3. নির্ভুল হওয়ার চিন্তা বাদ দিন
যারা সাধারনণত টাইপ ‘এ’ চরিত্রের মানে সবসময় শুদ্ধ চরিত্রের অধিকারী হতে চান তারাই মূলত হৃদরোগে বেশি ভোগেন। এ ধরনের বেক্তিরা অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে মনোভাব শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিচরিত্রে শত্রুতার মনোভাব তৈরি করে। টাইপ ‘এ’ চরিত্রের পেছনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। প্রকৃতপক্ষে, এ ধরনের মনোভাব ব্যক্তিমনে অন্যদের প্রতি প্রবল বিদ্বেষ তৈরি করে। তাই সবসময় ভালো চিন্তা করুন এবং সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন।
4. ক্ষোভ, রাগ ঝেড়ে ফেলুন
মনের মধ্যে জমে থাকা রাগ বা ক্ষোভ রাখার অভ্যাস কখনোই হৃদযন্ত্রের জন্য মঙ্গলহবে না । ক্ষমা করার পরিবর্তে ক্ষোভ জমা করে রাখলে মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং সেই সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ে। “আপনি ভাবতেই পারবেন না মনের মধ্যে ক্ষোভ জমা থাকলে তা কত দ্রুত এবং দীর্ঘ সময় ধরে শরীরের ক্ষতি সাধন করে। তাই নিজের ঘাড় থেকে এই আপদ নামিয়ে মানসিকভাবে সুস্থ থাকুন সব সময়।”
5. বাস্তববাদী হওয়া
জীবন মানেই কিছু সমস্যা থাকবে এবং এমন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে যা জীবনে কাম্য নয়। তবে এও ঠিক, সবকিছুর সমাধান রয়েছে ও সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যায়। কাজেই বাস্তব পরিস্থিতি মেনে নিয়ে তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার মানসিকতা গ্রহণ করতে হবে। ফলে কিছুটা টেনশন কমে যাবে। তুলনামূলক ভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারের প্রতি অতিরিক্ত আবেগী মনোভাব দূর করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, প্রিয় ফুটবল দলের পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হারও বেড়ে যায়। তাই তুচ্ছ কারণে উত্তেজিত হওয়া যাবে না। কারণ জীবনের মূল্য এর চেয়ে ঢের বেশি।
6. সমস্যার তালিকা তৈরি করুন
আপনার মনে হতে পারে আপনি শত শত সমস্যায় ভুগছেন। তাই আপনার দুশ্চিন্তার কারণগুলোর একটা তালিকা তৈরি করুন। দেখবেন, অল্প কয়েকটির পর আর কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। এর মধ্যে কিছু সমস্যা থাকবে যেগুলো কমবেশি সবারই থাকে। আপনি উপলব্ধি করবেন যে আপনার আসলে দুশ্চিন্তা করার খুব বেশি কারণ নেই। এটা আপনার দুশ্চিন্তা কমাতে এবং আপনাকে মানসিকভাবে শান্তি দিবে। আস্তে আস্তে আপনার সমস্যা কমে আসতে থাকবে।
7. প্রাণ খুলে হাসুন
আপনি কি হাসতে জানেন না, বা হাসতে পারেন না ? এটা হতেই পারে না। মানুষ মানেই হাসি,কান্না,রাগ,দুঃখ থাকবেই। ২০০৫ সালে পরিচালিত গবেষণায় জানা যায়, সবসময় গম্ভীর থাকার বদলে প্রাণ খুলে হাসলে শতকরা বিশভাগ বেশি ক্যালরি পোড়ানো যায়। প্রাপ্তবয়স্ক কিছু মানুষকে নিয়মিত হাস্যকর এবং তুলনামূলক গম্ভীর চলচ্চিত্র দেখানোর পর গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে আসেন।
নিয়মিত আমোদ-প্রমোদ হৃদস্পন্দনের হার বাড়িয়ে দেয়। ২০১০ সালে প্রকাশিত আমেরিকান জার্নাল অফ কার্ডিওলজি’র তথ্যানুসারে, হাসি-ঠাট্টার ফলে দেহের সংবহনতন্ত্র বা বিভিন্ন নালীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই ঠোঁটের কোণে সবসময় এক চিলতে হাসি রাখুন কিংবা পারলে মন খুলে হাসুন।
8. বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান
খুউব গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস সেটা হল আপনার বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো। অবশ্যই যাদের আপনার ভালো লাগে বা ভালো বন্ধুর সাথে। সবসময় একাকী থাকা মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি হৃদযন্ত্রেরও ক্ষতি করতে পারে। এমনকি কখনও হৃদরোগ ধরা না পড়লেও ক্ষতির আশংকা থেকেই যায়। তাই একাকী ঘরে বসে না থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়ে পড়ুন। তবে এক্ষেত্রে প্রকৃত বন্ধু নির্বাচনে সচেতন হতে হবে।
The post ডিপ্রেশন – What Is Depression In Bengali appeared first on Chalo Kolkata.